আজকে খৈয়াছড়া ঝর্ণা নিয়ে হাজির হয়েছি আমরা। যান্ত্রিক জীবন থেকে পরিত্রাণ পেতে মানবজাতি স্বভাবতই ছুটে গেছে প্রকৃতির কাছে। কারো প্রিয় পাহাড় – পর্বত, কারো আবার প্রিয় জলাধার। মানুষের মস্তিষ্ক স্বাভাবিক রাখতে প্রকৃতির ভূমিকা অসামান্য। বাংলাদেশে পাহাড়ের যেমন রয়েছে অবাধ বিচরণ, তেমনি রয়েছে জলাধারের সমান অধিকার। বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ভ্রমণ করলে এমনই কিছু জলাধার এবং জলপ্রপাত এর দেখা মিলবে। চট্টগ্রামে রয়েছে কমলদহ, নাপিত্তাছড়া, সহস্রধারা, ঝরঝরি ঝর্ণা সহ বেশ কয়েকটি ঝর্ণা। মানবিক কোলাহল থেকে দূরে সরে প্রকৃতির যত কাছাকাছি যাওয়া যায়, মানসিক প্রশান্তি ততই খুজে পাওয়া যায়। এ কথা মাথায় রেখেই হয়ত ঝর্ণা গুলোর অবস্থান মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে, গভীর জঙ্গলের ভিতরে, যেখানে যেতে হলে পাড়ি দেয়া লাগে দুর্গম পথ। এরকমই ধরাছোঁয়ার বাইরে আরেক জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝর্ণা।
মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা
অবস্থান ও ইতিহাস
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে অবস্থিত ঝর্ণার নাম খৈয়াছড়া। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে প্রপাতের অবস্থান, সেই নামানুসারে রাখা হয়েছে প্রপাতের নাম। মিরসরাইয়ে অবস্থিত অন্যান্য ঝর্ণাগুলোর তুলনায় এই ঝর্ণা এবং এর গিরিপথ বেশ বড়। পাহাড়ের ভিতরের দিকে এর অবস্থান হওয়ার কারণে যানবাহন দিয়ে এর কাছাকাছি যাওয়া যায়, কিন্তু বাকিটা পথ হেটেই পার করা লাগে।
ঝর্ণাটি স্থানীয়দের কাছে চতল নামে পরিচিত। তারা মনে করেন, ৫০ বছর পূর্বে এই ঝর্ণা তৈরি হয় পাহাড়ি ঢলের কারণে, এর পূর্বে এটিকে কখনো দেখা যায়নি। আবার অনেকে ধারণা করেন, ৫০ বছর আগে থেকেই এই ঝর্ণা প্রবাহিত হয়ে আসছে। এলাকাটি জনমানবহীন এবং ঝোপঝাড়ের আধিক্য থাকার কারণে এই জলপ্রপাতের আবিষ্কার হতে সময় লেগেছে।
এই ঝর্নাটির উপরে আরো বেশকিছু ধাপ রয়েছে। এই পাহাড়ের সৌন্দর্য বর্ণনা করার কিছু নেই, নিজের চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুধাবন করা অসম্ভব।
করণীয় এবং সতর্কতা
অভিযানের শুরুতে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটা হল সাবধানতা এবং কিছুটা সাহস। জায়গাটি দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে সেখানে যাওয়া কষ্টসাধ্য বটে। দক্ষ গাইড ছাড়া সেখানে না যাওয়াই ভাল। যেহেতু পাহাড়ি এলাকা এবং পানির আস্তানা, তাই সেখানে যাওয়ার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হবে। বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢল সমস্যার কারণ হতে পারে, সেজন্য অবশ্যই দড়ি সাথে নিবেন, প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে। পানি থাকার কারণে জায়গাটি স্যাঁতস্যাঁতে, তাই বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন দুর্ঘটনা না ঘটে।
জায়গাটি ঘুরে, উপভোগ করে আশার পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জায়গাটি নোংরা না করা হয়, কারণ চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের “রামগড়-সীতাকুন্ড- রিজার্ভ ফরেস্টের” খৈয়াছড়া ঝর্ণাকে কেন্দ্র করে ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার অন্যতম মূল লক্ষ্য হল খৈয়াছড়া ঝর্ণার সংরক্ষণ।
কিভাবে খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাবেন ?
আপনি যদি ঢাকার দিক থেকে যান তাহলে চট্টগ্রামের মিরসরাই পার হয়ে বারতাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে নামবেন। বারতাকিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকের রাস্তা ধরে দশ মিনিট হাঁটলে পথে রেললাইন পরবে, রেললাইন পার হয়ে আরো দশ মিনিট হাঁটলে ঝিরি পাবেন। ইচ্ছে করলে ঢাকা চট্টগ্রাম রোড থেকে ঝিরি পর্যন্ত আপনি সি.এন.জি নিয়েও যেতে পারবেন। ঐখান থেকে আপনাকে খৈয়াছড়া ঝর্ণার মূল ট্র্যাকিং শুরু করতে হবে। ঝিরি থেকে শেষ স্টেপ পর্যন্ত সোয়া দুই ঘন্টার মত সময় লাগবে।
পর্যটকদের থাকার জন্য সীতাকুন্ডে খুব সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে তবে পর্যটকরা চাইলে এখানে অবস্থিত মন্দিরগুলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন। আর এটাই হবে এডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণপীপাষুদের সবচেয়ে ভাল অভিজ্ঞতা। সীতাকুণ্ড থেকে বারটাকিয়া বাজারের দুরত্ব ১৮ কিলোমিটার। তবে থাকার জন্য ভুল করেও চট্টগ্রাম শহরকে বেঁছে নিবেন না, তাহলে শহরের যানযট ঠেলে এটুকু আসতে আপনার সারাটা দিনও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কন্টেন্ট রাইটারঃ ফাতেমা নজরুল স্নেহা
[…] না। চোখের ক্ষিধে মিটিয়ে বের হয়ে পরি ঝর্না অভিযানে। জীবনে এই প্রথম কোনো ঝর্না দেখতে […]
[…] না। চোখের ক্ষিধে মিটিয়ে বের হয়ে পরি ঝর্না অভিযানে। জীবনে এই প্রথম কোনো ঝর্না দেখতে […]