Porjotonlipi
Khan Jahan Ali Bridge

খুলনা বিভাগ ও তার ঐতিহ্য

বাংলাদেশের আটটি বিভাগের মধ্যে খুলনা বিভাগ একটি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর এই খুলনা। এটি দেশের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত। খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা ও ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীনতম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা অন্যতম এবং বিভাগের সদর দপ্তর খুলনা শহরে। খুলনা শহরকে শিল্প নগরী হিসেবে ডাকা হয় বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় । সবচেয়ে ভালোলাগার ব্যাপার হলো খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, খুলনা, ও সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবনের বিস্তৃতি ঘটেছে। আর সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার বলা হয় এই খুলনাকে।

একনজরে খুলনা বিভাগ

ভৌগলিক অবস্থান ও আয়তন

  • খুলনা বিভাগের পূর্বে ঢাকা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগ, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানা, উত্তরে রাজশাহী বিভাগ, এবং দক্ষিণে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন নামে খ্যাত সুন্দরবন সহ বঙ্গোপসাগরের উপর তটরেখা রয়েছে।
  • গঙ্গা নদীর দ্বীপ বা গ্রেটার বেঙ্গল ডেল্টার একটি অংশবিশেষ খুলনা। অন্যান্য নদীর মধ্যে রয়েছে ভৈরব নদী, মধুমতি নদী ও কপোতাক্ষ নদী।
  • খুলনা জেলার পূর্বে বাগেরহাট জেলা এবং পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলা রয়েছে উত্তরে যশোর ও নড়াইল জেলা; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং এর আয়তন ৪৩৯৪.৪৫ কিমি।

খুলনা বিভাগের নামকরণ

এই বিভাগের নামকরণ করা হয়েছে খুলনা সদরের নামে। প্রচলিত মতানুসারে ভৈরব নদীর তীরে খুল্লেনেশ্বরী দেবীর মন্দির ছিলো, যা খুলনা শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে এবং এই দেবীর নামানুসারে খুলনা অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে।

প্রশাসনিক জেলা

খুলনা বিভাগ ৫৯টি উপ-জেলা (উপজেলা) উপবিভাজন নিম্নলিখিত ১০টি জেলা (জিলা) নিয়ে গঠিত হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা, খুলনা জেলা, চুয়াডাঙ্গা জেলা, ঝিনাইদহ জেলা, নড়াইল জেলা, বাগেরহাট জেলা, মাগুরা জেলা, মেহেরপুর জেলা , যশোর জেলা ও সাতক্ষীরা জেলা ।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

প্রতিষ্ঠা

 

১৮৮৫

 

আয়তন

 

৪,৩৯৪.৪৫ বর্গকিমি (১,৬৯৬.৭১ বর্গমাইল)

 

জনঘনত্ব ৫৩০বর্গকিমি (১,৪০০/বর্গমাইল)

 

জনসংখ্যা ( ২০১১ ) ২৩,১৮,৫২৭

 

সাক্ষরতার হার

 

৭৯.৯%

 

পোস্ট কোড

 

৯০০০
প্রশাসনিক

বিভাগের কোড

 

৪০ ৪৭

 

Khulna University

শিল্প প্রতিষ্ঠান

খুলনা বিভাগ শিল্পে সমৃদ্ধ একটি বিভাগ। খুলনা বিভাগের প্রধান সমৃদ্ধ জেলা হল কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা। খুলনা বিভাগের এই জেলাগুলোতে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও বাগেরহাট সহ বাকি জেলাগুলোতে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

  • খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১১৪টি ছোট, বড় ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে গত চার বছরে । এ সময় নতুন শিল্প কলকারখানায় বিনিয়োগ হয়েছে ১৩ হাজার ২২৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ২১ হাজার ৫৪৯ জনের।
  • খুলনা বিভাগীয়  বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৩৭টি নতুন শিল্প কলকারখানার নিবন্ধন করা হয় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয় ৮৪৫৩.৩০৯৮ মিলিয়ন টাকা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় ৫ হাজার ৮৭৩জনের।
  • জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ১১টি নতুন শিল্প কলকারখানার নিবন্ধন করা হয় সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থ বছর। এ সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয় ১৭৪৩.৭৭৫০ মিলিয়ন টাকা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ২১ হাজার ৫৪৯ জনের। এদিকে, উক্ত চার বছরে খুলনা বিভাগে ১৫৩টি শিল্প কলকারখানার নিবন্ধন সংশোধন করা হয়েছে।
  • নতুন গড়ে ওঠা  উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে,  জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল, এলপি গ্যাস, অটো রাইস মিল, মাছের হ্যাচারি ও হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ক্যাটল, প্রোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড, প্রকৌশল শিল্প, রসায়ন শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্টিলাইজার, ডেইরি প্রোডাক্টকস অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম, অটোমেটিক ব্রিক ফিল্ড, প্লাস্টিক প্রোডাক্টকস, নির্মাণ শিল্প, পোল্ট্রি হ্যাচারি, পাওয়ার প্লান্ট এবং চামড়া ও ট্যানারি শিল্প ইত্যাদি।

Shat Gambuj Mosque

খুলনা বিভাগের বিখ্যাত বা দর্শনীয় স্থান:

  • সুন্দরবন
  • পিঠাভোগ
  • দক্ষিণডিহি
  • খুলনার বিভাগীয় জাদুঘর
  • বধ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধ, গল্লামারী
  • চুকনগর
  • শিরোমণি
  • রূপসা নদী পাড়
  • খান জাহান আলী সেতু
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরালয়

প্রকাশিত খবরের কাগজ

খুলনা বিভাগ থেকে প্রকাশিত দৈনিক এবং সাপ্তাহিক খবরের কাগজ সমূহ : দৈনিক গ্রামের কাগজ, লোকসমাজ, স্পন্দন, দৈনিক পূর্বাঞ্চল, দৈনিক খুলনাঞ্চল, দৈনিক দৃষ্টিপাত, দৈনিক দক্ষিণের মশাল, খুলনা নিউজ, দৈনিক মাথাভাঙ্গা, দৈনিক সাতক্ষীরা নিউজ, দৈনিক খেদমত, দৈনিক সময়ের খবর,  দৈনিক আমার একুশ, দৈনিক জন্মভূমি, দৈনিক অনির্বাণ, দৈনিক প্রবাহ , দৈনিক তথ্য , পত্রদূতগ্রামের কাগজ, খুলনা গেজেট, যুগের বার্তা ।

খুলনা কিসের জন্য বিখ্যাত?

সুন্দরবন

সুন্দরবনের জন্য খুলনার পরিচিতি বেশি। সুন্দরবনের নামটা এসেছে হয়তো সুন্দরী গাছ থেকেই। কারণ এখানে সুন্দরী গাছ প্রচুর পরিমাণে হয়। যদিও অনেক মতবাদ আছে এই নামকরণ নিয়ে। মূলত সুন্দরবন বলতে বোঝায় সুন্দর একটি বন বা জঙ্গল। তবে সমগ্র সুন্দবনের প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটারই বাংলাদেশের। এই বনে সুন্দরী গাছ সহ নানা ধরনের চমৎকার চমৎকার গাছ গাছালি দিয়ে ভরপুর এই বন । ১৯০৩ সালে মিস্টার প্রেইন তার একটি সুন্দরবনের গাছপালা নিয়ে লিখিত গ্রন্থে বলেছিলেন এই বনে প্রায় ৩৩৪ ধরনের উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে।

বাংলাদেশের সর্বশেষ জরিপ অনুয়ারী এই বনে ২০ হাজারের মত বানর , ১০৬ টি বাঘ,  ও প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজারের মত হরিণ রয়েছে।

Sundarban

সন্দেশ

সারা বাংলাদেশে খুলনা বিখ্যাত সন্দেশের জন্যও । বিভিন্ন ধরনের সন্দেশের মধ্যে নলেন ছানার সন্দেশ ও গুড়ের সন্দেশ বেশি বিখ্যাত। নলেন গুড় তৈরি হয়  শীতের খেজুর রসের নলেন গুড়, দুধের ছানা দিয়ে । যার স্বাদ অতুলনীয় এবং ঘ্রাণ খুবই সুন্দর ।

নারিকেল

চারিদিকে শুধু চারিকেল গাছের সবুজ সমারহ দেখতে পাবেন খুলনার যে দিকেই চোখ দেন না কেন। বাংলাদেশের অর্থকারী ফসলের মধ্যে নারিকেল অন্যতম। নারিকেল গাছের সবুজ পাতায় পড়ে সকাল বেলার লাল সূর্য যখন তখন চোখ ধাঁধানো দৃশ্য দেখতে পাবেন।

গলদা চিংড়ি

খুলনা জেলার আলাদা করে অনেক পরিচিতি রয়েছে শুধুমাত্র চিংড়ির জন্য। প্রচুর পরিমাণে চিংড়ির চাষ করা হয়ে থাকে এই জেলায়। বৈদেশিক মুদ্রার বেশির ভাগ অংশ আসে চিংড়ি রপ্তানিতে। অনেক বড় বড় ঘেরে চিংড়ির চাষ করা হয়খুলনার সাতক্ষীরা সহ বিভিন্ন জায়গায়। এই চিংড়ি থেকে প্রতি বছরেই কোটি কোটি টাকা আয় হচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ

  • সাহিত্যিক – মোহাম্মদ লুৎফর রহমান
  • এম শমশের আলী -পরমাণু বিজ্ঞানী
  • ছড়াকার – আবু সালেহ
  • বনানী চৌধুরী – প্রথম মুসলিম চিত্রনায়িকা
  • মাশরাফি বিন মুর্তজা – অধিনায়ক – বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
  • সৌম্য সরকার – ক্রিকেটার – বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
  • মোস্তাফিজুর রহমান (ক্রিকেটার) – বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
  • সালমা খাতুন – অধিনায়ক – বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল
  • রুমানা আহমেদ – প্রমিলা ক্রিকেটার – বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল
  • নূর মোহাম্মদ শেখ – বীরশ্রেষ্ঠ

খুলনা বিভাগের সংস্কৃতি

পালকির গান, ওঝার গান, বাওয়ালীদের গান, গাছ কাটার গান, গাড়োয়ানের গান, জেলেদের গান, কুমারের গান, হাবু গান, ধান কাটার গান, ধুয়া গান ইত্যাদি খুলনা জেলার পেশাভিত্তিক লোকজ সংস্কৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য । এছাড়া আছে তালের পাখা, বাঁশ ও বেতের পাত্র, মাটির পাত্র, পুতুল ও খেলনা, মাদুর, কাঠের খেলনা ইত্যাদি তৈরি কাজে নিয়োজিত পেশার মানুষের দ্বারা গড়ে ওঠা লোকজ সংস্কৃতি।

হাজারো বৈচিত্র্যে ভরপুর আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এই দেশকে ভালবাসুন, সুন্দর বাংলাদেশ ঘুরে দেখুন, দেশ ও দেশের মানুষ সম্পর্কে জানুন। আর অবশ্যই পর্যটনলিপির সাথেই থাকুন।

কন্টেন্ট রাইটারঃ তাসনিয়া মাহবুব তৈশী

 

Porjotonlipi

1 comment