আজ পর্যটনলিপি আপনাদের সামনে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কুমিল্লা জেলা নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরবে। পর্যটনলিপি ধারাবাহিকভাবে আপনাদের সামনে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান তুলে ধরার চেষ্টা করছে এবং আপনাদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে সত্যিই আমরা আনন্দিত।
রস মালাইয়ের কুমিল্লা জেলা
বর্তমান কুমিল্লা চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন একটি জেলা। প্রাচীনকালে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল। মোট ১৭টি উপজেলা নিয়ে এই জেলা গঠিত। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শনাদি থেকে যতদূর জানা যায় খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৌদ্ধ দেববংশ রাজত্ব করে। নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা হরিকেলের রাজাগণের শাসনাধীনে আসে। প্রত্নপ্রমাণ হতে পাওয়া যায় যে, দশম হতে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর এ অঞ্চল চন্দ্র রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে। খাদি বস্ত্র, রসমালাই এবং মৃৎশিল্প বহু বছর ধরে এই অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
যা যা আছে কুমিল্লা জেলায়
প্রাচীনকাল থেকে এই উপ-মহাদেশে হস্তচালিত তাঁত শিল্প ছিল জগদ্বিখ্যাত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সব সময় এই তাঁতের কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হতো। একটি পেশাজীবী সম্প্রদায় তাঁত শিল্পের সাথে তখন জড়িত ছিলেন। তাদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হতো ‘যুগী’ বা ‘দেবনাথ’। বৃটিশ ভারতে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের সময়কালে ঐতিহাসিক কারণে এ অঞ্চলে খাদি শিল্প দ্রুত বিস্তার লাভ ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তখন খাদি কাপড় তৈরি হতো রাঙ্গামাটির তূলা থেকে। জেলার চান্দিনা, দেবিদ্বার, বুড়িচং ও সদর থানায় সে সময় বাস করতো প্রচুর যুগী বা দেবনাথ পরিবার। বিদেশি বস্ত্র বর্জনে গান্ধীজীর আহ্বানে সে সময় কুমিল্লায় ব্যাপক সাড়া জাগে এবং খাদি বস্ত্র উৎপাদনও বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে কুমিল্লার খাদি বস্ত্র। এই বস্ত্র জনপ্রিয়তা অর্জন করে কুমিল্লার খাদি হিসাবে।
আর রসমালাই র কথা কি আর বলার প্রয়োজন আছে? কুমিল্লার রসমলাই সারাদেশে এক নামে পরিচিত। দুধ, ছানা ও চিনি সমন্বয়ে তৈরি এ মিস্টান্ন। যার প্রচলন কুমিল্লাতেই শুরু হয়। প্রতি কেজি রসমলাই স্থানভেদে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি প্রস্তুতের জন্য কুমিল্লা বিখ্যাত। তবে কুমিল্লার সেরা রসমালাই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কিন্তু ‘মাতৃ ভান্ডার’। জেনে রাখা ভালো, কুমিল্লা তে প্রচুর ‘মাতৃ ভান্ডার’ নামক দোকান রয়েছে। তবে প্রকৃত ‘মাতৃ ভান্ডার’ কুমিল্লা শহরে মনোহরপুরে অবস্থিত।
কুমিল্লার আরো একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প হলো মৃৎ শিল্প। বাংলার লোকশিল্পের আবহমান সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের অন্যতম কুমিল্লার মৃৎশিল্পের বিভিন্ন পণ্য । প্রাচীনকাল থেকেই কুমিল্লায় তৈরীকৃত গৃহস্থালি তৈজসের মধ্যে কলসি, হাঁড়ি, জালা, সরাই বা ঢাকনা, শানকি, থালা, কাপ, বদনা, ধূপদানি, মাটি নির্মিত নানা খেলনা এবং ফল, পশু-পাখি ইত্যাদি বিখ্যাত ছিল । তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা ক্রমশ ম্রিয়মাণ হতে থাকলে ১৯৬১ সালে ডঃ আখতার হামিদ খান বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বাঁশের বাঁশির জন্য কুমিল্লা বিখ্যাত। কুমিল্লার হোমনার শ্রীমদ্দি গ্রাম উপমহাদেশের বাঁশের বাঁশির জন্য সুবিখ্যাত; শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশিপাড়ার বাঁশি বর্তমানে দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে সগৌরবে।
ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাওয়ার পথে সকল গাড়িই কুমিল্লায় যাত্রা-বিরতি দেয়। সেই সময়টায় আপনি চলে যেতে পারেন কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী নুর মানিকচর জামে মসজিদে। নুর মানিকচর বাজারেই পেয়ে যাবেন সেখানে যাওয়ার সিএনজি চালিত ট্যাক্সি কিংবা রিকশা। এছাড়াও রয়েছে বায়তুল আজগর জামে মসজিদ, শাহ সুজা মসজিদ এবং উটখাড়া মাজার যা কুমিল্লার দেবিদ্বারে অবস্থিত।
কুমিল্লার ধর্মসাগর, রানির কুঠি, টাউন হল, বীরচন্দ্র নগর পাঠাগার, শালবন বিহার, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, লালমাই চন্ডিমুড়া মন্দির ইত্যাদি স্থান পর্যটন এলাকা হিসেবে সারাদেশে প্রসিদ্ধ।গোমতী নদী ঘুরে আসতে কিন্তু ভুলবেন না। কোম্পানীগঞ্জ বাজার হতে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। বাস/ ট্যাক্সিযোগে যাওয়া যায় গোমতী নদীতে।
কুমিল্লা জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা
ঢাকা কিংবা চট্রগ্রাম থেকে বাস কিংবা ট্রেন যোগে আপনাকে আসতে হবে কুমিল্লায় এরপর একে একে সবগুলো পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখতে পারবেন। এছাড়াও দেশের যেকেনো প্রান্ত থেকে ট্রেনযোগে আসতে পারবেন কুমিল্লায়।
কুমিল্লায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
কুমিল্লা শহরে খাওয়ার পাশাপাশি থাকার জন্যও খুবই ভালো মানের আবাসিক হোটেল গড়ে উঠেছে। পর্যটকদের সুবিধার্তে কিছু হোটেলের ঠিকানা দেওয়া হলো।
১. হোটেল কিউ প্যালেস ইমতিয়াজ আহমেদ কোরাইসী রেইসকোর্স, কুমিল্লা
২. আমানিয়া রেষ্ট হাউস হাজী নুরুল আমিন আমানিয়া রেষ্ট হাউস (আবাসিক) কান্দিরপাড়, কুমিল্লা
৩. হোটেল ড্রিমল্যান্ড জনাব খিজির হায়াত খাঁন হোটেল ড্রিমল্যান্ড (আবাসিক) ছাতিপট্টি, কুমিল্লা
৪. হোটেল নিদ্রাবাগ জনাব সালামত আলী খাঁন হোটেল নিদ্রাবাগ (আবাসিক) রাজগঞ্জ, কুমিল্লা
৫. মাসুম রেষ্টহাউস জনাব মোঃ ইউসুফ জামিল মাসুম রেষ্টহাউস (আবাসিক) শাসনগাছা, কুমিল্লা
৬. হোটেল মেলোডি জনাব নেয়ামত আলী হোটেল মেলোডি (আবাসিক) শাসনগাছা, কুমিল্লা
৭. হোটেল নূর জনাব মোঃ আরিফুল ইসলাম হোটেল নূর (আবাসিক) শাসনগাছা, কুমিল্লা
৮. সবুজ রেষ্টহাউস জনাব মোঃ ছবির আহম্মদ ভূঁঞা সবুজ রেষ্টহাউস (আবাসিক) ষ্টেশন রোড, কুমিল্লা
৯. হোটেল মিডটাউন জনাব এ.জেড.এম ছালেকীন হোটেল মিডটাউন (আবাসিক) পুলিশ সুপার মার্কেট, কুমিল্লা
১০. হোটেল মেরাজ হাজী ইস্কান্দর আলী হোটেল মেরাজ (আবাসিক) কান্দিরপাড়, কুমিল্লা
১১. ঢাকা রেষ্ট হাউস হাজী আহাম্মদ আলী ঢাকা রেষ্ট হাউস(আবাসিক) রেলগেইট, শাসনগাছা
১২. আজমীর রেষ্ট হাউস জনাব সামছুল হক নিজামী আজমীর রেষ্ট হাউস (আবাসিক) মনোহরপুর, কুমিল্লা
১৩. হোটেল আল-ফালাহ জনাব মোঃ আবদুর রহমান হোটেল আল-ফালাহ (আবাসিক) আলেখারচর, কুমিল্লা
১৪. হোটেল আল-রফিক জনাব মোঃ রফিকুল হক হোটেল আল-রফিক (আবাসিক) কান্দিপাড়, কুমিল্লা
১৫. আনছারিয়া রেষ্ট হাউস জনাব মাহবুবুর রহমান আনছারিয়া রেষ্ট হাউস (আবাসিক) মোগলটুলী, কুমিল্লা
১৬. আসিক রেসিডেন্সিয়াল রেষ্টহাউস জনাব মামুদুর রহমান আসিক রেসিডেন্সিয়াল রেষ্টহাউস (আবাসিক) নজরুল এভিনিউ, কুমিল্লা
১৭. নিউ আল-আমিন রেষ্ট হাউস জনাব মোঃ নাসিম নিউ আল-আমিন রেষ্ট হাউস (আবাসিক) আলেখারচর, কুমিল্লা
১৮. বিরতি রেষ্টুরেন্ট সৈয়দ শফিকুল হক বিরতি রেষ্টুরেন্ট আলেখারচর, কুমিল্লা
১৯. হোটেল কস্তুরী কাজী গোলাম মোস্তফা টিপু হোটেল কস্তুরী, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা
২০. সুগন্ধা হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট জনাব মোঃ শের আলী সুগন্ধা হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট ফৌজদারী, কুমিল্লা
[…] চট্টগ্রামে এবং অন্যটি কুমিল্লার […]