বন্ধুরা আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে পর্যটনলিপি বরাবরই বাংলাদেশকে একটু ভিন্ন রূপে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কটকা – বন্য সমুদ্র সৈকত
তারই ধারাবাহিকতায় আজ পর্যটনলিপি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছে একটি ভিন্নধর্মী সমুদ্র সৈকতের গল্প, আর সেটি হল সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত । হয়তো অনেকেই এর কথা এখনো জানেন না আবার হয়তো অনেকেই জানেন।
কটকা সমুদ্র সৈকত এবং এর আকর্ষণ সমূহ
মংলা বন্দর থেকে কটকা সী বীচের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। ৪০ ফিট উপরে থাকা ওয়াচ টাওয়ারে হেঁটে বীচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। কটকা থেকে কাচিখাল বাঘের জায়গা পর্যন্ত প্রচুর ঘাস জন্মে বলে অনেক জীবজন্তুর আনাগোনা রয়েছে। এখানে প্রচুর জীবজন্তও দেখা যায়। কটকা সী বিচ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। এখানে বেলাভূমি জুড়ে আঁকা থাকে লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম।
বাঘ এবং পায়ের ছাপ
সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। তবে বনে বাঘের দেখা মেলা ভার। আর তার ওপর বাঘের দেখা মিললেও নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি তো আছেই। তবে বাঘ দেখা ও নিরাপদে থাকা- এ দুই-ই সম্ভব সুন্দরবনের চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র কটকা অভয়ারণ্য থেকে। এখানে প্রায়ই দেখা মেলে সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। এ ছাড়া মনোরম চিত্রা হরিণের দল, বিভিন্ন জাতের পাখি, শান্ত প্রকৃতি এবং বিভিন্ন বন্য প্রাণীর উপস্থিতির কারণে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় কটকা অভয়ারণ্য সব সময়ই আলাদা স্থান দখল করে আছে।
সূর্যাস্ত ও মনোরম দৃশ্য
সূর্যাস্ত দেখার জন্য এই স্থানটি বেশ মনোরম। কটকা বন বিভাগ কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি টেইলের উত্তর পাশের খালটির ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল দেখা যায়। এ ছাড়া একটু নিরিবিলি স্থানে যেতে পারলে দেখা যায় চিত্রা হরিণের দল। বনের দক্ষিণে কিছুক্ষণ হাঁটলে চোখে পড়বে পরপর তিনটি টাইগার টিলা। এ টিলায় প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। টাইগার টিলা থেকে সামান্য পশ্চিমে বয়ার খাল। খালের দুই পাশ কেওড়া, গোলপাতা আর নানান পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে আছে চারপাশ। এছাড়া কটকার জেটির উত্তরে খালের চরজুড়ে থাকা কেওড়ার বনেও দেখা মেলে দলবদ্ধ চিত্রা হরিণ, বানর আর শূকরের। আবার শীতের সময় দেখা মিলে যেতে পারে রোদ পোহানো লোনা জলের কুমির। কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে একটি ছোট খাড়ি চলে গেছে সোজা পূর্ব দিকে।
ওয়াচ টাওয়ার
ছোট খাড়ির পথে কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে ছোট্ট জেটি এবং ওপরে ওয়াচ টাওয়ার। কটকার ওয়াচ টাওয়ারটি চারতলা বিশিষ্ট। ৪০ ফুট উচ্চ টাওয়ার থেকে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে এখানে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হতে ফেরার সময় হেঁটে বীচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। পূর্বে দীর্ঘ বন আর মাঝে মিঠা জলের পুকুর। এই পুকুরের পানি পান করেন কর্মরত কোস্টগার্ড, ফরেস্ট অফিসার ও স্থানীয় জেলেরা। এখান থেকে আশপাশে তাকালে দেখা মেলে সুন্দরবনের প্রায় বিপন্ন প্রাণীদের। এ ছাড়া ওয়াচ টাওয়ার থেকে খানিকটা সামনে এগুলে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি খালের মাঝেও দেখা মেলে বিপুলসংখ্যক বন্যপ্রাণীর। সবমিলিয়ে কটকা অভয়ারণ্য প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের এক অপরূপ লীলাভূমি।
জামতলা সমুদ্র সৈকত
কটকা ওয়াচ টাওয়ারকে পিছু ফেলে সোজা উত্তরে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গেলে জামতলা সমুদ্র সৈকত। পথে চলতে চলতে বিভিন্ন আকারের জামগাছ, আর এখানেই সৈকতটির নামের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। জামতলা সৈকতটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। বেলাভূমিজুড়ে শুধুই দেখা যায় কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। কোথাও কোথাও দেখা যায়, জোয়ারের ঢেউয়ে ধুয়ে যাওয়া গাছের শেকড়। সৈকতটি সোজা পুবে গিয়ে শেষ হয়েছে কচিখালিতে। জামতলা সমুদ্র সৈকতটি স্নানের (গোছল) জন্য আদর্শ জায়গা নয়।
কিভাবে যাবেন কটকা সমুদ্র সৈকত
বর্তমানে ছোট-বড় শতাধিক ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত। যেকোনো ভাল ট্যুর কোম্পানির সাথে চুক্তি করে সুন্দরবনে যাওয়া যায়। সুন্দরবনে যাওয়ার পর ট্যুর কোম্পানির লোকদের সহায়তায় যেতে পারবেন কটকায়। রাজধানী ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে খুলনা, বাগেরহাটগামী বাস কিংবা কমলাপুর ট্রেনে করে খুলনা এসে রুপসা বা বাগেরহাটের মংলা থেকে পাবেন লঞ্চ। এছাড়া বাগেরহাটের মংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকে পাবেন সুন্দরবনে যাওয়ার নৌযান।
কটকা যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই যেতে হবে সুন্দরবন অঞ্চলে (খুলনা, বাগেরহাটের মংলা)। কটকায় বেড়াতে যাবার প্রধান মাধ্যম বলতে গেলে শুধুই লঞ্চ। আর পর্যটকদের নিয়ে এই লঞ্চ নোঙ্গর করা হয় কটকা খালে।
খরচ নিয়ে ধারণা
প্রথমেই যদি অভয়ারণ্য এলাকার দিকে আলোকপাত করি তবে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতিদিনের জনপ্রতি ভ্রমণ ফি – ১৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য – ৩০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১৫০০ টাকা।
এরপরে আসে অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটকদের ভ্রমণ ফি – ৭০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী- ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১০০০ টাকা ও গবেষকদের জন্য ভ্রমণ – ৪০ টাকা ।
মংলা থেকে সুন্দরবন কাছে হওয়ার কারণে করমজলে দেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা। হেলিকপ্টার/সী প্লেনের জন্য এককালীন ফি লাগে ৩০ হাজার টাকা, নবায়ন করতে ফি দিতে হয় ১০ হাজার টাকা।
বি.দ্র. – আপনাদের প্রতি আমাদের বিশেষ অনুরোধ এই স্থানে ভ্রমণে এসে এমন কিছু করবেন না যাতে করে প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
কন্টেন্ট রাইটারঃ তাসনিয়া মাহবুব তৈশী
[…] বন্দর থেকে কটকা সী বিচের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। ৪০ ফিট […]