Porjotonlipi

ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল জেলা

বন্ধুরা আপনারা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন পর্যটনলিপি বাংলাদেশের পর্যটন তথা সমগ্র পর্যটন শিল্পকে একটু ভিন্নভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তার ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল জেলা সম্পর্কিত কিছু কথা।

একনজরে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল

বাংলাদেশের ভ্রমণ মানচিত্রে যে সকল জেলা সমূহের নাম প্রতীকের ন্যায় উজ্জ্বল তার মধ্যে অন্যতম হলো টাঙ্গাইল জেলা। হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য সবুজের সমারোহে আচ্ছাদিত গভীর অরণ্য বাংলা সমৃদ্ধ জমিদারি ইতিহাস বিভিন্ন জমিদার বাড়ির সাথে সাথে মাজার মসজিদ ও নদী-নালা টাঙ্গাইল জেলা করেছে সমৃদ্ধ ভ্রমণপিপাসু মানুষের ঘুরে দেখার মত জায়গা কোন শেষ নেই এখানে।

Mohera-Palace2

টাংগাইল জেলার অবস্থান ও আয়তন:

বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। টাঙ্গাইল যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৯২ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি ঢাকা বিভাগের বৃহত্তম এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। সুনিতা এই জেলার মোট আয়তন ৩৪১৪.৩৫ স্কয়ার কিলোমিটার। এখানে রয়েছে বারোটি উপজেলা, দশটি পৌরসভা ও ১১০ টি ইউনিয়ন। এখানকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩৮ লক্ষ।

নামকরণ:

টাঙ্গাইল জেলার নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত থাকলেও ১৭৬৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ মানচিত্রে এমন কোন নামের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। বরং তৎকালীন সময়ে এ অঞ্চলকে ব্রিটিশ মানচিত্রে আতিয়া বা আটিয়া বলে দেখানো হয়েছে। ১৮৭০ মতান্তরে ১৮৭৬ সালে মহকুমা সদর দপ্তর থেকে এই অঞ্চলে। স্থানান্তরিত করা হয়। টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণীত খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের মতে ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উঁচু শব্দের পরিবর্তে টান শব্দটি বেশি ব্যবহার করত। আর এই টান শব্দটির সাথেই আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে এসেছে টাঙ্গাইল শব্দটি। অর্থাৎ টান অর্থ উচুঁ আর আইল হলো জমির সীমানা, এই দুই মিলে টাঙ্গাইল। তবে ১৯৬৯ সালের আগে এটি অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার একটি অংশ ছিল। ১৯৬৯ সালে একে জেলায় উন্নীত করা হয়।

দর্শনীয় স্থানসমূহ:

বহু প্রাচীনকাল থেকেই টাঙ্গাইলে দেশের একটি সমৃদ্ধ জনপদ। এমনকি সুপ্রাচীন পাল ও সেন আমলের সভ্যতার ঐতিহ্য ও লুকায়িত আছে এই জেলায়। এখানে রয়েছে অসংখ্য রাজা ও জমিদারদের রেখে যাওয়া পুরাকীর্তি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, মহেরা জমিদার বাড়ি, হেমনগর জমিদার বাড়ি, করটিয়া জমিদার বাড়ী, এলেঙ্গা জমিদার বাড়ী ও নাগরপুর জমিদার বাড়ি। পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাবে এসকল পুরাকীর্তি এখন অনেকটা ভঙ্গুর। কিন্তু এসকল স্থান আমাদের সম্পদ, এ ব্যাপারে আমাদের নিজেদেরই সচেতন হওয়া উচিত।পাশাপাশি এর সংরক্ষণ ও সংস্কারে আরো সচেষ্ট হওয়া উচিত।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মুসলিম ও হিন্দু শাসকগণ তৈরি করে রেখে গেছেন বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়। এর মধ্যে মুসলিম ঐতিহ্যের রয়েছে আতিয়া মসজিদ, ধনবাড়ী মসজিদ, কাদাম হামজা মসজিদ , খামারপাড়ার মসজিদ ও মাজার উল্লেখযোগ্য। আর হিন্দু রাজাদের তৈরি গুপ্ত বৃন্দাবন, পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রম, বারতীর্থ, বড় কালীবাড়ি এবং আনন্দমঠ উল্লেখযোগ্য।

এখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু, নাগরপুর চৌধুরীবাড়ী, এলেঙ্গা রিসোর্ট, যমুনা ক্যান্টনমেন্ট, যমুনা রিসোর্ট ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান সমূহ যা যেকোন ভ্রমণপিপাসু মানুষকে দিবে নির্মল কিছু আনন্দের মুহূর্ত।

এছাড়াও বাংলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে এখানে দাঁড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ ও বনগ্রাম গণকবর ।মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে স্মৃতিস্তম্ভের সামনে কিছুক্ষণ নীরব মুহূর্ত যাপন যেকোনো বাংলাদেশির জন্য নিঃসন্দেহে গর্বের।

টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। এই জেলার বেশ সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। এই টাঙ্গাইলে বেশ কিছু রাজবাড়ি রয়েছে। এদের মধ্যে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী, মহেড়া জমিদারবাড়ী, নাগরপুর জমিদার বাড়ী এবং ধনবাড়ী নবাববাড়ী অন্যতম। এই সকল প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

কেন আসবেন ঐতিহ্যবাহী জেলা টাঙ্গাইল

ভ্রমণ শুধু মনকে ভালো করার জন্য বা ক্লান্তি দূর করার জন্যই নয় নিজেকে জ্ঞানের আলোকে সমৃদ্ধ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নিজের দেশকে জানার বা চেনার জন্য নিজের দেশকে সর্বাগ্রে ঘুরে দেখা অপরিহার্য। নিজেকে জানতে হলে নিজের অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা উচিত। সে ক্ষেত্রে টাঙ্গাইল জেলার বুকে রয়েছে অপার ভান্ডার নিজের শিকড় কে জানার। আমি যে কোনো সচেতন বাংলাদেশী নাগরিককে অনুরোধ করব এই জেলাকে ঘুরে এখানকার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য কে জানার জন্য।

Mohera-Palace3

বন্ধুরা আপনারা যারা এখনো ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল জেলা ঘুরতে আসেননি, তারা অবশ্যই একবার হলেও ঘুরে যাবেন এই সকল ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনসমূহ। আর যারা ইতিমধ্যেই এসেছেন তারা অন্যদের উৎসাহিত করুন। কেননা আমাদের পর্যটন শিল্পের বিকাশ আমরা পর্যটকরাই ঘটাতে পারি। এর জন্য প্রয়োজন শুধু কিছুটা সদিচ্ছা। আর মনে রাখবেন টাঙ্গাইল এসে এই সকল স্থাপনা শুধু ঘুরে দেখলেই হবেনা, টাঙ্গাইলের বিখ্যাত চমচম খেতে কিন্তু একদমই ভুল করবেন না। আর ভ্রমণকালীন সময়ে অবশ্যই স্থানীয় জনগণের সাথে সুন্দর আচরণ করবেন, এতে করে আপনার ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরও চমৎকার।

কন্টেন্ট রাইটারঃ নূর তাসমিয়া তাহারাত সৌখিন

 

Porjotonlipi Desk

Add comment