এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর মুঘল ও ব্রিটিশ আমলের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলার সমাজব্যবস্থার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও মৌলিক বিষয় গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
মুঘল ও ব্রিটিশ আমলের স্মৃতি বিজড়িত এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর
অবস্থান
পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় অবস্থিত এই জাদুঘর। ঢাকার আদি নবাবদের স্মৃতিবিজড়িত নিমতলী প্রাসাদের ঐতিহ্য ও স্থাপনাকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। ১৭০০ থেকে ১৯০০ শতাব্দীর সময়কালের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে স্থাপন করা হয় এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করা হয় এবং সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম ৫০টি টিকেট ক্রয় করার মধ্যে দিয়ে জাদুঘর পরিদর্শনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় । ওইদিন প্রথম সদস্যদের পরিদর্শনের জন্য খুলে দেয়া হয় নতুন এ জাদুঘরের দরজা।
প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানে ডাঃ মাহফুজা বলেন যে ঐতিহ্য জাদুঘর এবং এশিয়াটিক সোসাইটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম যাতে পরবর্তী প্রজন্ম প্রাচীন ঢাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।
এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘরের অভ্যন্তরীণ চিত্র
এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘরটিতে পাঁচটি গ্যালারী রয়েছে যা প্রায় ৮০ টি নিদর্শন প্রদর্শন করে।
জাদুঘরের অধ্যক্ষের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রাচীন ঢাকার কার ১৫ টি পরিবার থেকে দীর্ঘ বংশধরদের সাথে নিদর্শনগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে। জাদুঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় নিদর্শন গুলোর মধ্যে একটি হল নবাব নুসরত জংয়ের দরবারের একটি ডায়োরামা বা ত্রিমাত্রিক উপস্থাপনা।
প্রদর্শনীর নিদর্শনগুলিতে কাঁটা, ছুরি, থালা – বাসন, প্লেট, গহনার বাক্স, মসলিনের কাপড়, জার, তামা এবং রৌপ্য মুদ্রা রয়েছে যা ১৭০০ সাল থেকে ১৯০০ সাল এর সময় কালে ঢাকাবাসীর দ্বারা ব্যবহৃত জিনিসগুলোর অন্তর্ভুক্ত। এবং ডিজিটাল উপস্থাপনা ও জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়। আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে পাঁচটি অংশ লক্ষ্য করা যায়।
-
গ্যালারি – ১
এই অংশে এশিয়াটিক সোসাইটির পটভূমি এবং ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। প্রদর্শনীতে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং প্রথম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আহমেদ হাসান দানির ছবি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
-
গ্যালারি – ২
এই অংশে নিমতলী অঞ্চলটি সংস্কার ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টার প্রদর্শন রয়েছে।
-
গ্যালারি – ৩
নবাব – নাজিম পরিবারকে কেন্দ্র করে, যারা মোগল রাজবংশের শেষ জন ছিল। প্রদর্শনগুলিতে ১৮৩৩ অবধি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিবরণ এবং ফটোগ্রাফ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
-
গ্যালারি – ৪
এই অংশে ফটোগ্রাফ সহ নায়েব-নাজিম পরিবারের সদস্যদের একটি তালিকা রয়েছে। গ্যালারিতে স্মরণীয় ঘটনার বিবরণ রয়েছে, পাশাপাশি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি সম্পর্কিত তথ্য ক্যাপ্টেন আর্চিবাল্ড সুইডেনও রয়েছে।
-
গ্যালারি – ৫
এই অংশে শিল্পকর্মের পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনার বেশ কয়েকটি নিদর্শন এবং ফটোগ্রাফ ধারণ করা আছে ।
জাদুঘর ভ্রমণের সময়সূচি
জাদুঘরটি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত (শুক্র ও শনিবার সহ) দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। জুম্মার নামাজের কারণে শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে শুরু হয়ে এক ঘন্টা বিরতি আছে।
প্রবেশ মূল্য
প্রবেশ টিকিটের দাম নিয়মিত দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ২০০ টাকা।
Add comment