আসছে ঈদ, সেই সাথে মাথায় চলে আসে ঈদ ভ্রমণ এর কথা! এবার ঈদে বেশ একটা লম্বা ছুটি পাচ্ছেন অনেকেই। সবাই হয়তো ঘরে বসে এই সময়টা কাটাতে চাইবেন না।
ঈদ ভ্রমণ ও করণীয়
পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য ঈদ এর ছুটি একটা অনেক বড় সুযোগ। তো কিভাবে এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে মনে কিছু স্মৃতি তৈরী করা যায় সেটা নিয়েই পর্যটনলিপির আজকের আয়োজন।
ঈদ ভ্রমণ এর জন্য স্থান নির্বাচন করা
প্রথমেই যেটি করবেন, তা হলো পরিবারের সবার সাথে বসে ভ্রমণের স্থান নির্বাচন। আসলে পারিবারিক বেড়ানোয় সবাই যখন তাদের আগ্রহ অনুযায়ী জায়গা নির্বাচন করে, বেড়ানোর মাঝে শুরু হয় তখন থেকেই। এর আরেকটি ভালো দিক হলো – পারিবারিক বোঝাপড়া ভালো হয়, সবার ইচ্ছা ও ভালোলাগা গুলো জানা যায়।
ঈদ ভ্রমণ ও বাজেট নির্ধারণ করা
ভ্রমণের স্থান বা জায়গা ঠিক করার পর যেটি করতে হবে তা হলো একটু খরচের হিসাব করা বা বাজেট নির্ধারণ করা। বাজেট নির্ধারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো –
-> হোটেল বা রিসোর্ট এর প্রতিদিনের ভাড়া
-> সবার প্রতি বেলা খাবার খরচ
-> বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাতায়াতের খরচ
-> উপহারের জন্য কেনাকাটা
-> বাস / ট্রেন বা নিজস্ব পরিবহনের জ্বালানি খরচ
-> যেকোনো জরুরি অবস্থার জন্য অতিরিক্ত খরচ
হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং দেয়া
ঈদের সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভিড় বেশি থাকে, কারণ কয়েকটা দিন সবারই ছুটি থাকে। আর তাই পছন্দের জায়গায় বেড়ানোর জন্য বেশ আগে থেকেই রিসোর্ট বা হোটেল বুকিং দেয়া প্রয়োজন। একা হোক কিংবা বন্ধু বান্ধব কিংবা পরিবার পরিজন, সবারই নিজস্ব পছন্দ রয়েছে যেমন “হিল ভিউ”, “বিচ ভিউ” অথবা “ফরেস্ট ভিউ” যার যেমন ইচ্ছা, সেরকম রুম পাওয়ার জন্য বেশ আগে থেকেই যোগাযোগ করে হোটেল বা রিসোর্টে বুকিং দেয়া প্রয়োজন।
প্রাথমিক চিকিৎসার সামগ্রী নেয়া
ঈদ ভ্রমণ করতে যেয়ে কেউ অসুস্থ হোক, এটা আমরা কখনোই চাইনা। কিন্তু ভবিষ্যৎ সবসময়ই অনিশ্চিত আর তাই নতুন পরিবেশের আবহাওয়া, খাবার ও পানিতে কারো কারো অসুবিধা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম ও শরীরে শক্তিদায়ক খাবার অবশ্যই সাথে নিয়ে যাওয়া উচিত।
নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল করা
নতুন জাগায় বেড়াতে গেলে নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করাটা জরুরি। দুর্গম কোথাও যাওয়ার আগে স্থানীয় মানুষজনের থেকে জেনে নেয়া জরুরি সেখানকার যোগাযোগ ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কে। স্থানীয় টুরিস্ট পুলিশ সম্পর্কে ধারণা ও যোগাযোগের নম্বর সেভ করে রাখা উচিত পরিবারের সবার কাছেই। সাধারণভাবে, সূর্যাস্তের পর নির্জন জায়গায় না বেড়ানো ভালো, আর যদি যেতেই হয় বেশি সংখ্যায় যাওয়া ভালো।
স্থানীয় মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা
আপনার বেড়ানো অনেক সহজ হবে যদি স্থানীয়দের প্রতি যত্নশীল হওয়া যায়। সেটা গাড়িচালক থেকে, বাদাম বিক্রেতা কিংবা চা বিক্রেতা কিংবা টিকেট বিক্রেতা যেই হোক, তাদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল, দু চারটা কথা বার্তায় দেখবেন অনেক তথ্য জানতে পারছেন, তাদের জীবন ধারা, তাদের সুখ দুঃখ আপনার বেড়ানোকে সমৃদ্ধ করবে। বেড়ানো মানেই কিন্তু শুধু নতুন জায়গা দেখা, ছবি ও ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয়া না, নতুন মানুষ ও জনপদের সাথে যোগাযোগের ও একটা সুযোগ তৈরী করে এই বেড়ানো।
“ভিড় হবেই” ব্যাপারটা মাথায় রাখা
ভ্রমণে, বিশেষ করে ঈদ ভ্রমণে দেশের বেড়ানোর জায়গাগুলি যেমন – কক্সবাজার, বান্দরবান, সাজেক, রাঙামাটি ও বৃহত্তর সিলেটে ভিড় থাকবেই। এজন্যে খুব সকালেই বেড়ানো শুরু করলে ভিড় কিছুটা এড়ানো যায়। তবে একটা উৎসবের আমেজে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই ছুটি কাটাতে আসবে – এটা স্বাভাবিক ভাবেই নিতে হবে। তবে ভিড় বেশি হলে যাওয়া আসার সময় বাস / ট্রেনের টিকেট পাওয়া মুশকিল হয়, সেক্ষেত্রে আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখা জরুরি।
দিনলিপি লিখে রাখা
ভ্রমণ আসলে শুধু আমাদের চোখের ক্ষুধাই মেটায় না বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ও পরিকল্পিত ভ্রমণ আমাদের শরীর, মনন ও আত্মিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। আর তাই, ভ্রমণে আপনার ছোট বড় অভিজ্ঞতাগুলো লিখে রাখলে একদিকে যেমন আপনার চিন্তা ধারার সুন্দর একটি প্রকাশ হয় ঠিক আপনার ভ্রমণ কাহিনী পরে আরো অনেকে সুন্দর জায়গা দেখতে ও নিজের দেশকে চিনতে জানতে উদ্বুদ্ধ হবে।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
ঈদ ভ্রমণে বের হবার সময় একটি চেকলিস্ট তৈরী করে মিলিয়ে নেবেন প্রয়োজনীয় ও আনুষঙ্গিক সবকিছু নিয়েছেন কিনা। পোশাক, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন এর পাশাপাশি ঈদ সংখ্যা রাখতে পারেন যেগুলোতে বিভিন্ন প্রজন্মের ঈদের বর্ণনা থাকে। পছন্দের গান নিয়ে প্লেলিস্ট তৈরী করতে পারেন। পাওয়ার ব্যাঙ্ক, অতিরিক্ত কিছু টাকা, এক সেট অতিরিক্ত পোশাক, কাগজ, কলম, নিজের ভিসিটিং কার্ড সহ সব কিছু নিয়েছেন কিনা দেখেই ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হওয়া ভালো।
দেশীয় সম্পদ রক্ষায় মনোযোগী হওয়া
দিন শেষে একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তখনি পূর্ণ হয় যখন –
-> আমার দ্বারা পরিবেশ নষ্ট না হয়
-> আমি অন্যের বিরক্তির কারণ না হই
আর তাই চলতে ফিরতে খাবারের প্যাকেট যেখানে সেখানে ফেলে দেয়া ও বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্যতে জোরে শব্দ করা থেকে নিজেকে বিরত না রাখলে আমি আসলে নিজের দেশটাকেই ধ্বংস করি আর পরে নিজেই বলতে থাকি এই দেশে বেড়ানোর ভালো জায়গাই নাই! সুতরাং পরিবেশটা পরিষ্কার রাখতে যেন আমরা সবসমই এগিয়ে থাকি কারণ দেশটা আমাদেরই।
ভালো থাকবেন সবাই। পরিবার নিয়ে আপনার সময় আনন্দময় হোক। দেশের প্রতি যত্নবান থেকে সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে যাক সবখানে।
লেখক – আবু মো: আব্দুল্লাহ
Add comment