আয়া সোফিয়া এই পৃথিবীর ইতিহাসে মাথা তুলে দাঁড়ানো অসাধারণ এক স্থাপত্যকর্ম। আয়া সোফিয়া তুরস্কের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় স্থান যা শতাব্দীর পর শতাব্দী মুগ্ধ করে চলেছে সারা পৃথিবীর মানুষকে। পর্যটনলিপির আজকের আয়োজনে আসুন এই আয়া সোফিয়ার সৃষ্টি ও এর সৌন্দর্যের বর্ণনা আর সাথে প্রাসঙ্গিক আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আয়া সোফিয়া এর ইতিহাস
পনেরোশো (১৫০০) বছর আগে ইস্তানবুলে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনার একটি অভিজাত জায়গা হিসেবে তৈরী করা হয় আয়া সোফিয়া। ইস্তানবুল শহর প্রথমে কনস্টান্টিনোপল পরিচিত ছিল। সেই সময়ে অর্থাৎ ৩৬০ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ নির্মিত হয়।
ইতিহাস সাক্ষী আছে, সাধারণত অভূতপূর্ব সুন্দর স্থাপনা কিংবা মানুষ কখনোই বিতর্কের বা বিবাদের উর্ধে থাকেনা, আয়া সোফিয়াকে ঘিরেও ঠিক তাই! সৃষ্টির কয়েক দশক পরেই আগুন লাগে এই অসাধারণ সুন্দর প্রার্থনালয়ে। পুড়ে চাই হয় একাংশ, আর ৪১৫ সালে আবারো মেরামতের পর আয়া সোফিয়া নতুন করে আবির্ভুত হয়। কিন্তু সেটিও একশো বছরের মাথায় আবার ও পুড়েছে আগুনে। সময়ের ব্যবধান থাকলেও এই দুটি দুর্ঘটনার পেছনেই ছিল তৎকালীন রাজপরিবারের রাজনৈতিক কলহ।
৫৩২ সালে তৃতীয়বারের মতো মেরামত করিয়ে নির্মাণ কাজ এর অনুমোদন আসে এবং ৫৩৭ সালে শেষ হয় সেই কাজ। নিখুঁত কারুকাজ ও রং বেরঙের নকশার কারণে আয়া সোফিয়া খুব দ্রুত আকর্ষিত করে বিশ্বের পর্যটক ও গবেষকদের।
আয়া সোফিয়া দেখতে কেমন?
আয়া সোফিয়া দেখতে সনাতন খ্রিস্টান ধর্মের প্রার্থনালয় গির্জার মতন। প্রবেশ করার দরজা থেকে ভেতরের নকশা এটি মনোমুগ্ধকর যে দিনের আলোয় বিশাল এই উপাসনালয়কে মনে হয় ধারণার বাইরে উঁচু কোনো কক্ষ। যে দিকটি আয়া সোফিয়ার নকশাকে আলাদা করে তা হলো একশত পঞ্চাশ ফুট উঁচু গম্বুজ আর সেটির কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে যাওয়া চল্লিশটি জানালা যা থেকে আলোর প্রবেশে ভেতরের রঙিন কারুকাজ ও লেখাগুলো যেন জেগে ওঠে। বড় বড় মিনার ও স্তম্ভ রয়েছে যেটির সমস্ত দিক জুড়ে রয়েছে ধর্মীয় বিভিন্ন বার্তা ও মনোমুগ্ধকর চিত্রকর্ম।
আয়া সোফিয়া ও অসাম্প্রদায়িকতা
শুধু দেখতে অওসাধারণ সুন্দর কোনো গির্জা হিসেবে স্থাপিত হয়েই আয়া সোফিয়ার গুরুত্ব শেষ হচ্ছে তা কিন্তু নয়! ধর্মীয় কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি তৎকালীন রাজপ্রধানদের ক্ষমতা গ্রহণ ও তার ফলশ্রুতিতে শপথ গ্রহণের কার্যক্রম ও চলতো এখানে।
শুরুটা খ্রিষ্টান ধর্মের গির্জা হিসেবে অনেক দিন চললেও পঞ্চদশ শতাব্দীতেই তুরস্ক মুসলিম সাম্রাজ্যের মাঝে চলে আসে আর তাই আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। ওই সময় ইম্পিরিয়াল মসজিদ নাম এটি পাঁচশত বছর স্থায়ী ছিল।
বর্তমানেও এটি বেস্ট একটি মসজিদ হিসেবে চালু আছে। আয়া সোফিয়ার ভেতরের ও বাইরের কাঠামোটি এখন অনেকটাই খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের ঐতিহ্য ধারণ করছে। সারা বিশ্বে এটি অসাম্প্রদায়িক একটি জায়গা হিসেবেও সুপরিচিত কারণ এখানে এই দুই ধর্মেরই হিতকর বাণী খোদাই করা আছে।
আয়া সোফিয়ার বৈশিষ্ট্য
মনে হতে পারে, একটি উপাসনালয় তো, তাহলে কেন উচ্চতায় এত বড় ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ? প্রথমত – আয়া সোফিয়া বিশাল উঁচু করে তৈরী করা হয়েছে যেন এখানে প্রার্থনা করতে যেই আসুক, তার যেন মনে হয় বিশ্বের সৃষ্টির কাছে সে কত ক্ষুদ্র আর তাই তাকে কতটা যত্নের সাথে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
অসাধারণ সুন্দর এই জায়গায় আসলে আপনা আপনিই মনটা নরম হয়ে আসে ও সৃষ্টকর্তার সাথে সংযোগ করতে আশা প্রার্থনাকারীরা চোখের সামনে জানালা গলিয়ে আশা আলোকে ঐশ্বরিক আলো হিসেবে ভাবতে থাকে।
কিভাবে যাবেন আয়া সোফিয়া
শহরের সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে পায়ে হেটে খুব সহজেই পৌঁছানো যায় এই আয়া সোফিয়াতে যেটা বর্তমানে মসজিদ এবং জাদুঘর হিসেবেও ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টেও (বাস ও ট্রাম) পৌঁছানো যায় এখানে।
সপ্তাহে ৬ দিনই খোলা থাকে আয়া সোফিয়া আয়া সোফিয়া জাদুঘর দেখার জন্য টিকেট সিস্টেম রয়েছে যেটি অনলাইনেও সংগ্রহ করা সম্ভব। শীতকালে অপেক্ষাকৃত কিছু সময় আগে বন্ধ হয়ে যায় তাই সময়সূচি দেখে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
কোথায় থাকবেন
আয়া সোফিয়ার আসে পাশেই রয়েছে দুর্দান্ত সব হোটেল। মাত্র ২৭০ মিটার দূরেই রয়েছে ষ্টার হোটেল ইস্তানবুল যেখানে রুম ভাড়া ৪,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়। আলবাট্রস আয়া সোফিয়া হোটেল রয়েছে ৪০০ মিটার দূরে যার রুম ভাড়াও ৪,০০০ টাকা থেকে শুরু।
আয়া সোফিয়া ও পর্যটকদের করণীয়
এখানে প্রবেশের সময় কিছু ব্যাপার অবশ্যই মাথায় রাখতে হয় যেমন – পোশাক আশাকের পবিত্রতা – যেহেতু এটা এখন একটি নামাজের জায়গা, আর তাই ধর্মীয় আবেগ রক্ষা করে অবশ্যই ভেতরে প্রবেশ করা উচিত।
সংগীত পরিহার – আয়া সোফিয়া মসজিদে প্রবেশের আগে লক্ষ্য রাখা উচিত – যেন মোবাইল ফোন গুলো কোনোভাবেই সংগীতমুখর হয়ে না যায়! অন্তত যতক্ষণ এখানে থাকা হবে, খেয়াল রাখা উচিত কোনো সংগীত এর চর্চা না হয়ে যায়।
সম্মান – ভেতরে প্রার্থনারত বর্তমান মুসলিমদের প্রতি সম্মান রাখা উচিত যাতে তাদের মনোযোগে বিঘ্ন না ঘটে।
নিজের দেশের পাশাপাশি ইচ্ছা থাকা উচিত এমন যেন হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা ও সেই সভ্যতায় জীবনধারা আমরা জানতে পারি। এর ফলে সামনের দিন গুলোতে কঠিন মুহূর্ত মোকাবেলা যেমন সহজ হবে তেমনি নিজের চেনা জানা জগৎ ছাড়িয়েও যে আরো কত জগৎ আছে সেটি জেনেও বিস্মিত হতে পারি। আয়া সোফিয়া যেন ঠিক তাই, নীরবে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছে ইতিহাসের শত কথা। সময় ও সুযোগ হলে, একবার ঘুরে আসতে ভুলবেন না।
কন্টেন্ট রাইটারঃ আবু মোহাম্মদ আবদুল্লাহ
[…] বিশেষ কিছু স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে আয়া সোফিয়া গুরুত্বপূর্ন। মহান সম্রাট […]