Porjotonlipi

অপার সম্ভাবনাময় আদিবাসী সম্প্রদায় ও রাঙামাটি

আদিবাসী সম্প্রদায় এর একটি বিরাট সংখ্যা রাঙামাটি অঞ্চলে বসবাস করে। রাঙামাটি জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি একটি পার্বত্য জেলা ও বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা।

বৈচিত্র্যময় আদিবাসী সম্প্রদায় ও রাঙামাটি

উপজেলার সংখ্যানুসারে রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। আদিবাসী সম্প্রদায় এর ভিন্নধর্মী নানান আচার-অনুষ্ঠান সকল প্রকারের মানুষের কাছেই আকর্ষণীয়।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের রীতিনীতি

আদিবাসী সম্প্রদায় এর মানুষজন নানান ধরনের উৎসব পালন করে থাকে। আদিবাসী সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশে ব্যাপক চর্চার আহ্বানের মধ্য দিয়ে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী সংস্কৃতি মেলা হয়ে থাকে যা সাধারণত অন্য কোথাও দেখা যায়না।এছাড়াও তারা প্রবারণা পূর্ণিমাতে নানান প্রকারের ফানুস উড়িয়ে চমকে দিয়ে থাকে।বাংলা নববর্ষে তারা বৈসাবি নামক উৎসব পালন করে থাকে।

আদিবাসী সম্প্রদায় এর খাবার আয়োজন

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর খাবারেও রয়েছে নানান ধরনের আকর্ষণ।

মারমা

আদিবাসী মারমা সম্প্রদায়ে আঠালো ভাতের সঙ্গে ‘নাপ্পি’ (শুটকি) খাওয়া হয়। কখনো কখনো তাদের আহারে ভাতের সঙ্গে ‘লাসৌ’ও (বিভিন্ন মিশ্রণের ভর্তা) থাকে। এছাড়া তারা বিন্নি চালের সঙ্গে নারকেল ও চিনি যোগ করে স্যুপের মতো আঠালো করে এক প্রকার খাদ্য খেতেও পছন্দ করে। ‘সাংগ্রাই’ উত্সবে মারমারা বিভিন্নি সবজি ও শুটকি দিয়ে ‘হাংরো’ তৈরি করে, যা তাদের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। মারমাদের অন্যতম পছন্দের আরেকটি খাবার হচ্ছে কচি বাঁশ সিদ্ধ, যা সবজি হিসেবে ব্যবহূত হয়। স্থানীয়ভাবে এটি বাঁশ কোড়ল নামে পরিচিত। মারমারা বিকেলের নাস্তায় ‘মুন্ডি’র আয়োজন করে। মুন্ডি দেখতে অনেকটা নুডলসের মতো, যার ওপরে শুটকির গুঁড়া ও গরম পানি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

চাকমা

জনসংখ্যায় এদেশের সর্ববৃহৎ আদিবাসী গোষ্ঠি চাকমা। তেল ও মশলার একেবারে অল্প পরিমাণে ব্যবহার তাদের রান্নার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে চাকমারা সিদ্ধ ঝাল তরকারি বেশি পছন্দ করে। এ গোষ্ঠির প্রধান খাদ্য ভাত। শাক বা সবজি সিদ্ধ মরিচ ভর্তা দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া হয়। চাকমাদের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম ‘সিদল’। এটি শুটকি জাতীয় খাবার, যা অনেক মাছের শুটকি একসঙ্গে মিশিয়ে বানানো হয়। তারা তাদের বেশিরভাগ তরকারি সিদল দিয়ে রান্না করে। সিদল দিয়ে বানানো আরেকটি বহুল প্রচলিত খাবার হচ্ছে ‘হোরবো’। সিদল দিয়ে মরিচ ভর্তা করে তার সঙ্গে বিভিন্ন টক জাতীয় ফল যেমন-আম, চালতা, আমড়া ইত্যাদি মিশিয়ে এই হোরবো বানানো হয়। চাকমারা অনেক আগে বাঁশের ভেতরে মাছ মাংস রান্না করতো, যা ‘সুমো তোন’ নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে এটির প্রচলন কমে এসেছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার শুটকি মাছ দিয়ে রান্না করা একটি খাবার হচ্ছে ‘হেবাং’, যেটাকে ‘সুগুনি হেবাং’ বলা হয়ে থাকে। চাকমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম ‘পাচন তোন’। চৈত্র সংক্রান্তির উত্সব ‘বিঝু’-তে বাড়িতে বাড়িতে পাচন রান্না করে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। কমপক্ষে পাঁচটি সবজির সংমিশ্রণে এটি রান্না হয় বলেই এ রকম নামকরণ। তবে বিঝুর পাঁচনে পাঁচের অধিক সবজি ব্যবহার করা হয়। চাকমাদের খাবারের তালিকায় মিষ্টান্নের খুব একটা প্রচলন না থাকলেও বিভিন্ন উত্সবে পায়েস আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়া বিনি চাল আর নারকেল দিয়ে কলাপাতায় মুড়ে বানানো হয় বিনি পিঠা। চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হয় বড়া পিঠা, শান্নে পিঠা ইত্যাদি। চাকমা সমাজে বয়স্কদের মধ্যে তামাক খাওয়ার প্রচলন আছে। তাদের তৈরি নিজস্ব হুঁক্কার মাধ্যমে তামাক সেবন করা হয়। এই হুঁক্কাকে চাকমা ভাষায় দাবা বলে।

ত্রিপুরা

ত্রিপুরাদের প্রধান খাদ্য ভাত। প্রতিবেলায় ভাতের সঙ্গে থাকে সিদ্ধ সবজি, মরিচ ও ভুট্টা। তাদের শাক-সবজি সিদ্ধ মানেই এই মরিচ ও ভুট্টার উপস্থিতি। তারা বাঁশ কোড়লকে চাখৈ, মৈতুরু, বাংসোং, কেসক, লাকসু, বাজি প্রভৃতি বিভিন্ন উপায়ে খেয়ে থাকে। সবজি হিসেবে ঢেড়স, কলাগাছ, মাসরুম ঝিঙ্গা, হলুদ ফুল, আদা ফুলকে তারা সিদ্ধ এবং গুদাক (বিশেষ এক প্রক্রিয়া) করে খায়। ত্রিপুরারা মাছকে রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়ে খেতে পছন্দ করে। তাদের ঐতিহ্যবাহী ‘বৈসুক’ উত্সবে মাংস রান্নার প্রচলন রয়েছে। ত্রিপুরাদের মাংস রান্নাকে সুস্বাদু করতে একরকম বিশেষ সুগন্ধি পাতা ‘বানা’ দেওয়া হয়। এছাড়া এদিন নারীরা বিন্নি চালের পিঠা ও চোলাই মদ তৈরি করে। বৈসুকে পিঠা বেশ প্রসিদ্ধ। বিন্নিচাল, কলাপাতা এবং লাইরু পাতা দিয়ে তারা পিঠা তৈরি করে থাকে। অতিথি আপ্যায়নে ত্রিপুরাদের রয়েছে বিশেষ সুপরিচিতি।

গারো

গারো সমাজে আগে জুমচাষ প্রচলিত ছিল। সে সময় পাহাড়ে জুম পদ্ধতিতে যেসব শাক-সবজি চাষ করা হতো তা দিয়েই তারা জীবন ধারণ করতো। গারোদের খাবারে তেল ও মশলার ব্যবহার নেই। অধিকাংশ খাবারের সঙ্গেই শুটকি ও খাবার সোডা ব্যবহৃত হয়। তাদের বিভিন্ন উত্সব-পার্বণে শূকরের মাংস প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিবেশন করা হয়। এ মাংসের সঙ্গে চালের গুঁড়া, আদা, রসুন, পেঁয়াজ ও মরিচ দিয়ে তৈরি করা হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘ওয়াক ঘুরা’। গারোরা মাটির নিচে হওয়া এক ধরনের বিশেষ বড় জাতের আলুর সঙ্গে শুটকি ও সোডা দিয়ে রান্না করে। ছোট মাছ কলা পাতায় মুড়িয়ে আগুনে পুড়িয়ে বানানো ‘হিথোপ্পা’ তাদের বেশ সুস্বাদু একটি খাবার।

মণিপুরী

চাকমাদের মতো মণিপুরীরাও খাবারে তেল ও মশলার ব্যবহার করে না বললেই চলে। প্রাত্যাহিক জীবনে মণিপুরীরা আঠালো ভাতের সঙ্গে সিদ্ধ সবজি এবং বিভিন্ন রকমের ডাল দিয়ে তৈরি ‘খার’ খায়। খার তৈরিতে ডালের সঙ্গে আদা পাতা, হলুদ পাতা, লেবু পাতা দেওয়া হয়। এরপর এতে কলাগাছ পুড়িয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ছাই দেওয়া হয়, যা খারে ব্যতিক্রমধর্মী এক ফ্লেভার যোগ করে। তাদের প্রতিবেলা ভাতের সঙ্গে থাকা আরেকটি সবজি তরকারি হচ্ছে ‘পালটৈ’। মণিপুরীদের খাদ্য তালিকায় মাংস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে মাংস খাওয়ার প্রচলন ছিল। পরবর্তীতে চৈতন্যের আদর্শে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণের পর থেকে তারা তা পরিহার করে। মণিপুরীদের যে কোনো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই খাওয়া-দাওয়ার একটি পর্ব থাকে। যাকে ‘বান্দারা’ বলে। এখানে কলা পাতায় করে খাবার দেওয়া হয়, যা পুরোটাই নিরামিষ। ‘উটি’,‘চাগেম পমবা’, ‘চামখোঙ/কাঙসোই’ হচ্ছে প্রচলিত কিছু নিরামিষ তরকারি। চেঙুম বা মাশরুমও বান্দারাতে পরিবেশন করা হয়। বান্দারায় মণিপুরীদের বিশেষ সালাদ ‘চিনচু’ বেশ সমাদৃত। এছাড়াও ভর্তা ও ডাল জাতীয় খাবার এদের বিশেষ পছন্দের। বিভিন্ন উত্সবে মণিপুরীরা এক বিশেষ মাছের তরকারি রান্না করে, যা ‘নাগা’ বলে পরিচিত। প্রায় প্রতিটি মণিপুরী বাড়িতেই নিজস্ব কিচেন গার্ডেন ও ছোট পুকুর থাকে। যেখানে বিভিন্ন শাক-সবজি ও মাছের চাষ হয়। তকপানিকম, নিয়াঙপা, ইকাইতাপি, ফাকপই, ফাতিকম, নুংশিহজক, কেলিকদম, লংচাক, নেন্নাম প্রভৃতি তাদের নিজস্ব কিছু সবজি আইটেম। এগুলোকে একসঙ্গে ‘মারৈ’ বলে। মণিপুরীদের আরেকটি বিশেষত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে ‘উছেইর ইরলপা’। এটি কচি বাঁশ, ডাল, স্মোকড ফিশ এবং মারৈ সিদ্ধ করে বানানো হয়। বিকেলের নাস্তায় শরীর চাঙা রাখতে ভাজা চাল, শুকনো মাছ আর মারৈ দিয়ে খুব ঝাল করে একরকম ছাতু তৈরি করা হয়, যা ‘করেইর চিনচু’ নামে পরিচিত।

সাঁওতাল

অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সাঁনতাল বা সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য ভাত। তবে তাদের রান্না পদ্ধতি ভিন্ন। ভাত রান্নায় তারা পানি পুরোপুরি শুকায় না। সিদ্ধ গরম পানি থাকা অবস্থাতেই তা পরিবেশন করা হয়। তারা মাছ, কাঁকড়া, শূকর, খরগোশ ও পাখির মাংস পছন্দ করে। মুন্ডা, রাজবংশী, খাসিয়া, টিপরা, প্যাংখো, হাজং, তনচঙ্গা, ওরাও, রাখাইন, কোচ, বুনা, চাক প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও সিদল, নাপ্পি, বাঁশকড়ল ও তেল মশলা ছাড়া তাদের নিজস্ব কায়দায় রান্না করা বিভিন্ন সিদ্ধ সবজি ঐতিহ্যগতভাবে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

আদিবাসী সম্প্রদায় এর পোশাক

চাকমা এবং মারমা সম্প্রদায়ের পোশাক-পরিচ্ছদ

চাকমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, লোক সাহিত্য, সাহিত্য ও ঐতিহ্য রয়েছে । চাকমা মেয়েদের পরিধেয় পোশাক সাধারণত দুটি অংশে বিভক্ত। চাকমা নারীরা “বেইন” নামক কোমর তাঁতে কাপড় তৈরী করে থাকে। তাদের পরিহিত ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রের নাম “পিনন-হাদি” যা বিভিন্ন নকশা ও সুতার মিশ্রণে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ভাবে বুনন করা হয়ে থাকে।

পোশাকের নিচের অংশের নাম “পিনন” যা কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত এবং উপরের অংশ “হাদি”। পিননে কোনোরকম সেলাই থাকেনা। পিননের সাথে “চিবুকি” নামক নকশাযুক্ত আচল থাকে। হাদির সঙ্গে তারা ব্লাউজের মতো জামা পরিধান করে। তারা মাথায় খবং পড়ে।

এক সময় শুধু জুম ক্ষেতে উৎপাদিত তুলা থেকে তৈরী সুতা দিয়ে তাদের বস্ত্র তৈরী হলেও বর্তমানে তারা বাজার থেকে কেনা সুতা দিয়েও কাপড় বুনে থাকে। পুরুষরা “জুন্নাছিলুম”, “টন্নে হানি”,”খবং”,”ধুতি” পরিধান করে।

তাদের বর্ষবরণ উৎসব “বিজু”। এইদিনে তারা ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরিধান করে থাকে। এটি ছাড়াও বুদ্ধ পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, মহাসংঘ দান, মাঘী পূণিমা সহ অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তারা তাদের এইসকল ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র পরিধান করে। “আলাম” নামক কাপড়ে তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী নকশা সংরক্ষিত করে রাখে।

জুম ক্ষেতে উৎপাদিত তুলার আঁশ মোটা, খাটো ও খসখসে হয়। তাদের ধর্মীয় উৎসব “কঠিন চিবর দান” অনুষ্ঠানে ধর্মীয় গুরুকে এই তুলা দিয়ে তৈরি বস্ত্র উপহার দিয়ে থাকে।

মণিপুরীদের পোশাক-পরিচ্ছদ

বাংলাদেশের প্রাচীন হস্তশিল্পগুলোর মধ্যে মনিপুরী হস্তশিল্প সু-প্রসিদ্ধ। মণিপুরী নারীদের সুখ্যাতি রয়েছে হাতে বোনা তাঁতের কাপড়ের জন্য। শ্রীমঙ্গল ও বিশেষ করে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের প্রায় ৬০টি গ্রাম মণিপুরী তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত।

মণিপুরী নারীদের নিত্যদিনের ব্যবহার্য পোশাকের নাম, “ফুরিত-ফানেক-ফিদুপ”। নিচের অংশে পরিধেয় পোশাক “ফানেক” যা প্যাচ দিয়ে পড়তে হয়। আর ব্লাউজের মতো পোশাক ফুরিত। তারা ফুরিতের উপর “ফিদুপ” নামের ওড়না পড়ে। “ইনাফি” নামক এক প্রকার চাদর তারা গায়ে জড়িয়ে থাকে।

বিয়ে ও নৃত্যের সময় “পলই” নাম এর উজ্জ্বল, কারুকাজময় পোশাক পড়ে থাকে। পলই দেখতে অনেকটা চোঙ আকৃতির।মণিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা ও লাই- হারাওবা সহ অন্যান্য নৃত্যানুষ্ঠান এবং বিয়েতে তারা পলই এর সাথে সূক্ষ্ণ কারুকাজের ফুরিত, ইনাফি ও ফিদুপ পরিধান করে।

ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্পলে উৎপাদিত সুতার মাধ্যমে তারা উন্নত মানের বস্ত্র তৈরী করে থাকে। তবে বাজার থেকে কিনা সুতার মাধ্যমেও তারা এসব বস্ত্র তৈরী করে।

মণিপুরীদের তৈরী শাড়ি বেশ সুপরিচিত। মণিপুরী শাড়ির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর “টেম্পল মোটিফ” বুনন। তাদের ঐতিহ্যবাহী মৈরাংগ ফী নামক ওড়না থেকেই মনিপুরী শাড়ির উদ্ভব। শাড়ির পাড়ে ট্রাডিশনাল মন্দিরের নকশা ঠিক রেখে আচল ও জমিনে অন্যান্য নকশার মাধ্যমেও এই শাড়ি তৈরী হয়।

“মোটিফ হচ্ছে একটি ধারণা যেখানে কোন একটি ডিজাইন পুনরাবৃত্তি করে বিভিন্ন অাঙ্গিকে সাজিয়ে বুনন, সূচ ও খোদাই এর মাধ্যমে আকর্ষণীয় ও পরিপূর্ণ রূপ দেয়া হয়। যেমনঃ গাছ, পাতা, ফুল,সূর্য ইত্যাদি মোটিফ রূপে খোদাই, বুনন ও সূচি কাজে ব্যবহার হয়।” রাজশাহী সিল্ক সুতা থেকেও মণিপুরী শাড়ি তৈরী হয় যা মসৃণ ও হালকা।

মণিপুরী পুরুষেরা “ফেইজং” নামক ধুতি, “পুজাত” নামক পাঞ্জাবি ও লম্বা সাদা শার্ট পরিধান করে। তাদের ব্যবহার্য “ফুরিত” ফতুয়া ধরণের। বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা “কৈরাত” নামক পাগড়ি পড়ে।

বর্তমানে এসব সম্প্রদায়ের পোশাক-পরিচ্ছদে পরিবর্তন এসেছে। এখন নারীরা সালোয়ার-কামিজ সহ অন্যান্য আধুনিক পোশাক ও পুরুষেরা প্যান্ট,শার্ট পড়লেও সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং বিয়েতে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাককেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

গারো

গারো সম্প্রদায়ের মানুষের বিশেষ পোশাক হচ্ছে দকমান্দা। তারা বিশেষত তাদের নিজস্ব সামাজিক অনুষ্ঠানে দকমান্দা পরে থাকেন।

সাঁওতাল

সাঁওতাল পুরুষরা আগে সাদা থান কাপড়ের ধুতি পরতেন। বর্তমানে পাঁঞ্চি, ধুতি, পায়ঞ্জামা, গামছা ব্যবহার করে। নারীরা ‘ফতা‘নামের দুই খন্ডের কাপড় পরে থাকে। বর্তমানে ‘আরা পাঁঞ্চি’ও ব্যবহার করতে দেখা যায়। পুরুষ সকলে হাতে উল্কির ছাপ দেয়। মেয়েরা রূপার তৈরি গহনা যেমন- বালা, ঝুমকা, আংটি, মল, হাঁসুলি ইত্যাদি ব্যবহার করে এবং খোঁপায় ফুল গুঁজতে ভালোবাসে।

বাংলাদেশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে দেশীয় ঐতিহ্যে। তাদের পোশাক,খাবার এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসব লক্ষনীয়।

 

শাহীন সুলতানা

Add comment