Porjotonlipi

আড়াইহাজারের বিখ্যাত গোপাল ঘোষের মাঠা

আড়াইহাজারের মাঠা মানেই বিখ্যাত গোপাল ঘোষের মাঠা। বাঙালির রসনা প্রীতির কথাতো সবারই জানা। নিত্য নতুন খাবারের স্বাদ নিতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। তবে এই নিত্য নতুন খাবারের হাইপের চাপায় বাংলার অনেক ঐতিহ্যবাহী খাবারই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

আড়াইহাজারের বিখ্যাত মাঠা

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই খোঁজ মেলে কোন না কোন একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারের। আজ আপনাদের তেমনি একটি বিখ্যাত এবং প্রায় অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা ঐতিহ্যবাহী পানীয়ের গল্প শুনাবো।

দেশ বিখ্যাত গোপাল ঘোষের মাঠা

স্বাধীন বাংলার ১২ ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর রাজধানী হিসেবে পরিচিত ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ জেলা। এই নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার একটি প্রাচীন বাজার হলো গোপালদী বাজার। এই বাজারেই দেখা মিলবে তিন পুরুষের বিখ্যাত গোপাল ঘোষের মাঠার বা আড়াইহাজারের মাঠা । যা ইতিমধ্যে সারা দেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন এই মাঠার স্বাদ নিতে। এবং তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বাড়ি ফেরেন তারা।

পারিবারিক ঐতিহ্যগত ইতিহাস

১৯৬২ সালের দিকে গোপালদীতে আসেন স্বর্গীয় শ্রী অতুল চন্দ্র ঘোষ। তিনি বাড়িতে মাঠা তৈরী করে তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তার পিতামহ স্বর্গীয় ইশান ঘোষের কাছ থেকে তিনি এই মাঠা তৈরীর পদ্ধতিটি শিখেছিলেন। পরবর্তীকালে বংশ পরম্পরায় এই ব্যবসাকে ধরে রাখতে ছেলে গোপাল চন্দ্র ঘোষকে মাঠা তৈরীর পদ্ধতি শিক্ষা দেন তিনি।

আড়াইহাজারের গোপাল ঘোষের মাঠা এত জনপ্রিয়তার কারণ

সাধারণত মাঠা তৈরীর সময় মাখনকে আলাদা করে সাদা মাঠা বিক্রি করা হয়। তবে গোপালদী বাজারের এই মাঠার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি মাখনসহ তৈরী করা হয়। তাই এটি স্বাদেও অনন্য। এই মাঠার রংটাও দেখতে দারুণ। সাধারণত মাঠার রং হয় সাদা। তবে গোপালদী বাজারের এই মাঠার রং একেবারে গাঢ়। বাজার থেকে দেশীয় গরুর বাছাইকৃত দুধ ক্রয় করে তা ৭-৮ ঘন্টা জাল দিয়ে ঘন করা হয়। তারপর দুধকে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখার পর চিনি লবণ মিশিয়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে, ভেজাল মুক্ত ভাবে তৈরী হয় এই ষ্বরভোগের মাঠা। এতে কোন প্রকার কৃত্তিম রং বা প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় না। এটি খেতে বেশ সুস্বাদু। সম্পূর্ণ নতুন ফর্মুলায় তৈরী ব্যতিক্রমী স্বাদের এই ষ্বরভোগের মাঠার খোঁজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসে, খেয়ে তৃপ্তি পায়, বোতলে করে নিয়েও যায়।

দাম ও সময়

প্রতিদিন তৈরী করা হয় এই গোপাল ঘোষের মাঠা। ২৫০ মিলির প্রতি গ্লাসের দাম ৩০ টাকা আর প্রতি ১ লিটার বিক্রি করা হয় ১৪০ টাকা করে। বিক্রি শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে। সাধারণত রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া যায় এই মাঠা। তাই আপনি যদি এই অতুলনীয় পানীয়টির স্বাদ নিতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই এই সময়ের ভিতরে আসতে হবে।

পথ নির্দেশনা

দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে আসতে পারেন এখানে। সেজন্য আপনাদেরকে সোঁনারগা হয়ে আসতে হবে আড়াইহাজার বা স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে সিএনজি, অটো বা রিক্সায় করে চলে যেতে পারবেন গোপালদী বাজারে। বাজারের ৩ নং গলির ভেতরে মিষ্টি পট্টিতে গোপাল ঘোষের নির্মল দধি ভান্ডার।

 

ফাহিম সাদেক সৌরভ

Add comment