Porjotonlipi

মনপুরা দ্বীপ ও তার মায়াবী রূপ

মনপুরা দ্বীপ এর সৌন্দর্য্য নিয়ে কথা বলা বেশ কঠিন কাজ। পর্যটনলিপি আজ আপনাদের ঘুরিয়ে দেখাবে মায়ায় ঘেরা এক দ্বীপ, যার নাম ‘মনপুরা’। চলুন এক নজর দেখে নেই মনপুরা দ্বীপের সৌন্দর্য্য।

মায়াবী দ্বীপ মনপুরা

ভোলা জেলার অধীনস্থ মনপুরা দ্বীপ বিগত কয়েক বছর ধরে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দ্বীপটি ভোলা জেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। মেঘনা নদীর কোলে বেড়ে উঠা এই দ্বীপটিতে রয়েছে সবুজের সমারোহ। সত্যি কথা বলতে গেলে মুখে বলে এই দ্বীপের সৌন্দর্যবোঝানো সম্ভব নয়। যে এই মায়াবী দ্বীপে একবার না এসেছেন সে কখনোই বুঝতে পারবে না কি সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এই দ্বীপে। মনপুরা দ্বীপ বর্তমানে দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাগর কন্যা কুয়াকাটার সাথে এই দ্বীপের দারুন এক সাদৃশ্য রয়েছে। আপনি কুয়াকাটাতে যেমন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখতে পাবেন, ঠিক তেমনি ভাবে মনপুরা তে এসেও আপনি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই প্রতক্ষ করতে পারবেন। মনপুরা একজন ভ্রমনপীপাসুকে খুব সহজেই সৌন্দর্যের বাঁধনে বাঁধতে পারে। আর এই জন্যই হয়তো একে মায়াবী দ্বীপ বলা হয়ে থাকে।

Monpura1

মনপুরা দ্বীপের সৌন্দর্য্য কথন

মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির সারি সারি বাগান। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি জায়গাটিকে পরিণত করেছে সবুজের সমারোহে। মনপুরা দ্বীপের আশেপাশে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এসব চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে এসব চরাঞ্চল। চরগুলোর মধ্যে অন্যতম- চর তাজাম্মুল, চর পাতালিয়া, চর পিয়াল, চর নিজাম, চর সামসুদ্দিন, ঢাল চর, কলাতলীর চর। প্রত্যেকটি চরের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। চরগুলোই যেন মনপুরার অলঙ্কার!

ল্যান্ডিং স্টেশন, হরিণের অভয়াশ্রম ও চৌধুরী প্রজেক্ট রয়েছে মনপুরায়। ল্যান্ডিং স্টেশনটি নদীর ৫০০ মিটার ভেতরে তৈরী করা। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু পর্যটকরা না, স্থানীয়রাও সময় কাটাতে আসে এখানে। রাতে এখানে বসলে মনে হবে, আপনি মেঘনা নদীর গভীরে ভাসছেন। কারণ তখন আপনার চারদিকে থাকবে পানি আর আপনি বসে থাকবেন পানির সামান্য উপরে। নদীর পানির স্রোত আর ঢেউয়ে মাঝে মাঝে স্টেশনটি কেঁপে উঠে, তখন মনে হবে এই বুঝি নদীতে ভেসে গেলাম।

 

Monpura1

এখানে এসে আপনি সাক্ষাৎ পেতে পারেন হরিণ দলের! এখানে রয়েছে একটি হরিণের অভয়াশ্রম। জোয়ারের সময় হরিণগুলো প্রধান সড়কের কাছে চলে আসে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, হরিণের পাল যখন রাস্তা পার হয় তখন তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো, হরিণের পালের ছোটাছুটি, সুবিশাল নদীর বুক চিরে ছুটে চলা জেলে নৌকা, ঘুরে বেড়ানো মহিষের পাল আর আকাশ ছোঁয়া কেওড়া বাগান কঠিন হৃদয়ের মানুষেরও মন ছুঁয়ে যায়। চারদিকে নদীবেষ্টিত মনপুরায় নৌকা কিংবা সাম্পানের ছপছপ দাঁড় টানার শব্দ আর দেশি-বিদেশি জাহাজের হুঁইসেলের শব্দ মিলেমিশে একাকার হলে মনে হয় কোনো দক্ষ সানাইবাদক আর তবলচির মন ভোলানো যুদ্ধ চলছে।

বিশেষ আকর্ষণঃ

খাসি পাঙ্গাস, মহিষের দুধ দিয়ে তৈরি কাঁচা দই ও শীতের সময়  হাঁসের বিভিন্ন রকমের তরকারি এই তিনটি খাবার মনপুরার বেশ জনপ্রিয় খাবার।বাবুল হোটেল নামে স্থানীয় একটি খাবার হোটেল আছে এখানে আপনি নানান ধরণের খাবার পেয়ে থাকবেন। তবে যেহেতু মনপুরা একটি চরাঞ্চল সেহেতু সেখানে গিয়ে  মাছ খেতে ভুল করবেন না। ফরমালিন মুক্ত মাছ খাওয়ার এ এক সুবর্ণ সূযোগ।

যেভাবে যাবেনঃ

ঢাকা সদরঘাট থেকে ভোলাগামী বিভিন্ন লঞ্চ ছেড়ে যায়। সেই লঞ্চে চড়ে আপনি নেমে যাবেন তজুমুদ্দিন লঞ্চ ঘাট । তারপর সেখান থেকে ট্রলারে চেপে চলে যান মনপুরা দ্বীপে। আর শীতের সময়টাই মনপুরা ভ্রমনের উত্তম সময়।তাছাড়া এপ্রিল-নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই নদীপথটি বিপজ্জনক চিহ্নিত হওয়ায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে।

Monpura2

যেখানে থাকবেনঃ

মনপুরা দ্বীপে রাত্রি যাপনের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের (সরকারি ডাকবাংলো, কারিতাস বাংলো এবং প্রেসক্লাব বাংলো) ডাকবাংলো আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় এই বাংলোগুলোতে থাকতে পারবেন।

হাজির বাজারে আপনি বাজেট হোটেল পেয়ে যাবেন। সিঙ্গেল রুম ১০০ টাকা এবং ডাবল রুম ২০০ টাকা। সায়মা হোটেল নামে একটা হোটেল আছে যা পুলিশ ফাড়ির পাশে অবস্থিত। এছাড়া আরেকটু ভালো মানের খুঁজতে চাইলে আছে হানিফ হোটেল যা বাজারের একদম শেষ মাথায় অবস্থিত। এখানের সিঙ্গেল রুম ২০০ টাকা এবং ডাবল রুম ৩০০-৩৫০ টাকা৷

তাছাড়াও মনপুরা দ্বীপে থাকবার কিছু হোটেল নাম্বার নিম্নে দেয়া হলো –

হোটেল দ্বীপ : ০১৭১-৩৯৬৫১০৬

প্রেস ক্লাব গেষ্ট হাউস : ০১৯১-৩৯২৭৭০৬

হোটেল আইল্যান্ডঃ সদর রোড, হাজিরহাট বাজার মনপুরা, ভোলা – ০১৭১১৭০১২৮৬

কারিতাস হোটেলঃ হাজিরহাট বাজারের দক্ষিন পাশে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের সাথে অবস্থিত। ০১৯২৩৩৭৬৩৬৫

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডাকবাংলোঃ উপজেলা সদরের হাজিরহাট বাজারের দক্ষিন পাশ্বে আবাসিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে অবস্থিত – ০১৯২৩৩৭৬৩৬৫

জেলা পরিষদ ডাকবাংলোঃ উপজেলা সদরের বাঁধের হাটের সরকারী দিঘীর পাশে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোটি অবস্থিত। : ০১৯৩৪১৭৫৩৬৯

এছাড়া চোধুরী সাহেবের বাংলো সহ আরো অনেক থাকার বোর্ডিং বা হোটেল আছে। দরদাম করে থাকতে পারবেন।

আর যাদের ক্যাম্পিং করার ভূত মাথায় আছে তাদের জন্য তো কোন কথাই নেই। আপনারা মনপুরা দ্বীপের যে কোন জায়গায় ক্যাম্পিং করতে পারবেন। বলে রাখা ভালো যে মনপুরা দ্বীপ ঘুরে দেখতে চাইলে একটি মোটর সাইকেল ভাড়া করে নিন এবং তাতে করেই উপভোগ করুন মনপুরার সৌন্দর্য। অবশ্যই মনে রাখবেন শুধুমাত্র সৌন্দর্য উপভোগ করলেই হবেনা, সেখানকার মানুষদের সাথে মেশার চেষ্টা করুন, দেখবেন তাদের কাছ থেকে অনেক ভালবাসা পাবেন। আর একটি কথা না বললেই নয়, মনপুরা ঘুরে দেখুন ভাল কথা কিন্তু এমন কোন কাজ করবেন না যাতে করে সেখানকার প্রকৃতি ও মানুষের ক্ষতি হয়। আর এই ধরণের কার্যকলাপ আমাদের পর্যটন শিল্পের জন্য হুমকি স্বরূপ।

 

Porjotonlipi Desk

Add comment